ঈদুল ফিতরের দিনে করণীয় ও বর্জনীয়
ঈদুল ফিতরের দিনে করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়গুলো জানুন। ঈদের নামাজ, তাকবির, সদকাতুল ফিতর ও হালাল আনন্দসহ কী করা উচিত এবং কী এড়িয়ে চলা প্রয়োজন, তা বিস্তারিত পড়ুন।

ঈদুল ফিতর মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে আনন্দঘন ধর্মীয় উৎসব। এক মাস সিয়াম সাধনার পর এই দিনটি মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের জন্য উদযাপিত হয়। তবে ঈদের দিন শুধুমাত্র আনন্দ করার জন্য নয়, ইসলামের নির্ধারিত কিছু ঈদুল ফিতরের দিনে করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়ও রয়েছে, যা প্রতিটি মুসলমানের জানা জরুরি।
পহেলা ফাল্গুন ২০২৫ | বসন্তকাল কত তারিখে
ঈদুল ফিতরের দিনে করণীয়
১. তাকবির ও দোয়া পড়া
ঈদের রাত ও ঈদের দিন সকাল থেকে তাকবির বলা সুন্নাত। কুরআনে বলা হয়েছে:
“তোমরা আল্লাহকে মহিমান্বিত করো, তিনি তোমাদের হেদায়েত দিয়েছেন।”
তাই ঈদের দিন এই দোয়া পড়তে হবে: اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْدُ
২. ফজরের নামাজ পড়া
অনেকেই ঈদের দিনে ফজরের নামাজ বাদ দেন, যা ঠিক নয়। ঈদের নামাজের আগে ফজরের নামাজ অবশ্যই আদায় করা উচিত।
৩. গোসল ও পরিপাটি হওয়া
ঈদের দিনে গোসল করা সুন্নাত। পাশাপাশি, নতুন বা পরিষ্কার পোশাক পরিধান করা উত্তম।
৪. সুগন্ধি ব্যবহার করা
পুরুষদের জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করা সুন্নাত। তবে মহিলাদের জনসম্মুখে সুগন্ধি ব্যবহার করা নিষেধ।
৫. ঈদের নামাজ আদায় করা
ঈদের নামাজ ওয়াজিব (অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত)। ঈদের নামাজ জামাতে আদায় করা উচিত এবং যথাসময়ে মসজিদ বা ঈদগাহে পৌঁছানো প্রয়োজন।
৬. ঈদের নামাজের আগে খেজুর বা মিষ্টি খাওয়া
রাসূল (সা.) ঈদের নামাজের আগে বিজোড় সংখ্যা খেজুর খেতে পছন্দ করতেন। যদি খেজুর না পাওয়া যায়, তাহলে অন্য মিষ্টি জাতীয় কিছু খাওয়া উত্তম।
৭. সদকাতুল ফিতর প্রদান করা
সদকাতুল ফিতর ঈদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি গরিবদের সাহায্য করার জন্য ফরজ করা হয়েছে।
৮. এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া ও অন্য রাস্তা দিয়ে ফেরা
রাসূল (সা.) ঈদের নামাজের জন্য এক রাস্তা দিয়ে যেতেন এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরতেন।
৯. পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের সাথে দেখা করা
ঈদের দিন আত্মীয়দের সাথে সাক্ষাৎ করা, কুশল বিনিময় করা, এবং দুঃস্থদের সহায়তা করা ইসলামে উৎসাহিত করা হয়েছে।
১০. আনন্দ ও উদযাপন করা
হালাল উপায়ে ঈদ উদযাপন করা এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা ঈদের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
ঈদুল ফিতরের দিনে বর্জনীয় কাজ
১. ঈদের নামাজ বাদ দেওয়া
অনেকে অলসতা করে ঈদের নামাজ আদায় করেন না, যা ইসলামসম্মত নয়।
২. অহংকার ও বড়াই করা
ঈদের দিন অহংকার করা এবং অন্যদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
৩. অপব্যয় করা
অনেকে ঈদের দিনে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খরচ করেন, যা ইসলাম সমর্থন করে না।
৪. হারাম বিনোদন বা গান-বাজনা শোনা
ঈদের আনন্দের নামে যদি হারাম কাজ করা হয়, তাহলে তা ইসলামের মূল চেতনার পরিপন্থী হয়ে যায়।
৫. গরিব ও অসহায়দের উপেক্ষা করা
ঈদ ধনী-গরিব সবার জন্য। তাই আশেপাশের গরিবদের সাহায্য করা ঈদের অন্যতম বড় দায়িত্ব।
৬. নামাজের জামাতে দেরি করা
ঈদের জামাতে দেরি করা উচিত নয়। ঈদের নামাজ শুরু হওয়ার আগেই ঈদগাহে পৌঁছানো উচিত।
৭. নারীদের জন্য সাজসজ্জায় বাড়াবাড়ি করা
নারীদের সাজসজ্জায় মধ্যপন্থা অবলম্বন করা উচিত। অশালীন পোশাক পরা ও পরপুরুষের সামনে সাজগোজ করা হারাম।
৮. রাগ, হিংসা ও বিদ্বেষ পোষণ করা
ঈদের দিন সকল মুসলমানকে ক্ষমাশীল হতে হবে। কাউকে দোষারোপ বা কষ্ট দেওয়া উচিত নয়।
ঈদুল ফিতরের করণীয় ও বর্জনীয় বিষয় নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা
করণীয় | বর্জনীয় |
---|---|
তাকবির বলা | ঈদের নামাজ বাদ দেওয়া |
গোসল করা | অহংকার করা |
ফজরের নামাজ পড়া | অপব্যয় করা |
ঈদের নামাজ আদায় করা | হারাম বিনোদন |
সদকাতুল ফিতর প্রদান | গরিবদের উপেক্ষা করা |
পরিবারের সাথে সময় কাটানো | জামাতে দেরি করা |
সুগন্ধি ব্যবহার করা | অতিরিক্ত সাজসজ্জা |
মিষ্টি খাওয়া | রাগ ও বিদ্বেষ পোষণ করা |
উপসংহার
ঈদুল ফিতর শুধু আনন্দের দিনই নয়, এটি আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দিনও। এই দিনকে যথাযথভাবে উদযাপন করতে হলে আমাদের করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে। ঈদুল ফিতরের দিনে করণীয় ও বর্জনীয় ইসলামের বিধান মেনে ঈদ উদযাপন করলে এটি পরিপূর্ণতা লাভ করবে এবং আল্লাহর রহমত আমাদের ওপর বর্ষিত হবে।