শবে বরাত ২০২৫ – ইতিহাস, তাৎপর্য, ফজিলত, ইবাদত ও করণীয়
"শবে বরাত ২০২৫ –জানুন শবে বরাতের ইতিহাস, তাৎপর্য, ফজিলত ও বিশেষ ইবাদত। এই পবিত্র রাতে করণীয় ও আমল সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন।"

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। শুরু করছি মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার প্রশংসা জ্ঞাপন করে নতুন এই নিবন্ধন। আজকের মূল বিষয় শবে বরাত। শবে বরাতের অদ্য-প্রান্ত এবং শুরু থেকে শেষ সকল বিষয়গুলো আজকের এই নিবন্ধনে পর্যায়ক্রমে উপস্থাপন করা হবে। মুসলিম সম্প্রদায়ের অত্যন্ত প্রিয় এবং বরকতময় একটি রাত হল শবে বরাত। ২০২৫ সালের যে সকল প্রার্থীরা শবে বরাত উদযাপন এবং এবাদত করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাদেরকে অবশ্যই এই রাতের ইতিহাস, তাৎপর্য, ফজিলত, ইবাদত ও করণীয় এবং বর্জনীয় সকল বিষয়গুলো জানা জরুরী। উত্তম দাওয়াত ডট কম ওয়েবসাইটের এই নিবন্ধনটি আপনাদেরকে অবশ্যই শবে বরাত ২০২৫ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করবে ইনশাআল্লাহ।
শবে বরাত ২০২৫: গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
ইসলামের প্রতিটি রাতকে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে বিশেষ কিছু রাতকে আরো গুরুত্বসহকারী পালন করার নির্দেশ প্রদান করেছেন মহান আল্লাহ সুবহানাতায়ালা। তাই অন্যান্য স্বাভাবিক রাত্রে এর চেয়ে শবে রাতের গুরুত্ব অত্যাধিক। সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এই রাতে মহান আল্লাহ সুবহানাতায়ালা অসংখ্য বান্দাকে ক্ষমা করে থাকেন। এছাড়া এই রাতে বিশেষ রহমত আল্লাহর পক্ষ হতে নাযিল করা হয়। এছাড়াও আগামী বছরের নির্দিষ্ট তাকদীর গুলো এই রাতে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে বলেই ইসলামিক স্কলারশিগণ উল্লেখ করেছেন।
শবে বরাতের ইতিহাস ও তাৎপর্য
মূলত শবে বরাতের ইতিহাস ও তাৎপর্য এক বিশাল। ইসলামের প্রাথমিক যুগ হতেই এই শবে বরাতের ইতিহাস লুকায়িত। মহান আল্লাহ সুবহানাতায়ালা এই রাতে বান্দাদের জন্য রহমতের সকল দরজা সমূহ খুলে দেন এবং তাদের গুনাহগুলো নির্দ্বিধায় মাফ করে থাকেন। তওবা এবং ইস্তেগফারের মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনা করলে ইনশাআল্লাহ আল্লাহ সেই বান্দাকে ক্ষমা প্রদান করবেন। নফল নামাজ কোরআন তেলাওয়াত দোয়া ও জিকিরের মাধ্যমে এই রাতকে অবশ্যই কাটানো প্রয়োজন। তাৎপর্যের দিক থেকে অন্যান্য দিনের থেকে শবে বরাতের মর্যাদা অধিক।
শবে বরাতের গুরুত্ব ও ফজিলত
এমন হাজারো প্রশ্নের সম্মুখীন মানুষ হয় যে মূলত শবেবরাতের গুরুত্ব এবং ফজিলত কি রয়েছে? নিঃসন্দেহে এই রাতের ফজিলত এবং গুরুত্ব রয়েছে। শাবান মাসের সবচেয়ে ইবাদতযোগ্য রাত হলো শবে বরাত। মূলত রামাদান মাসের পূর্বেই এই গুরুত্বপূর্ণ এবং বরকতময় রাত এসে থাকে। তাই আমরা যদি এইরাতকে গুরুত্বসহকারে ফজিলত পূর্ণ মনে করে যথাযথভাবে আমলগুলো সম্পন্ন করেন ইনশাআল্লাহ মহান আল্লাহ সুবহানাল্লাহ তা’আলা উত্তম পুরস্কার প্রদানের জন্য অপেক্ষা করছেন। তাই এই বিষয়গুলো যদি আমরা খুঁটিনাটি ভাবে জেনে তারপর ইবাদতে মগ্ন হয় তবেই একটি ভালো ফলাফল আশা করা যায়।
শবে বরাত কি?
মূলত শবে বরাত একটি ফারসি শব্দ। যার অর্থ হিসেবে আমরা জানি মুক্তির রাত। অপরদিকে এই রাতকে মাগফিরাতের রাত বা পরিত্রাণের রাত বলা হয়। মূলত আরবিতে এই শব্দকে বলা হয় লাইলাতুল বরাত। এই রাত্রি মূলত ১৪ থেকে ১৫ তারিখ এর মধ্যে সংঘটিত হয়ে থাকে। সারা পৃথিবীর মুসলিমরা বিশ্বাস করে যে এরাতে আল্লাহ বান্দার গুনাহ মাফ করেন এবং আগামী বছরের ভাগ্য লিপিবদ্ধ করেন। নিচের অংশগুলোতে আমরা ধারাবাহিকভাবে শবে বরাতের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করব।
শবে বরাত কবে ২০২৫
২০২৫ সালে শবে বরাত কবে অনুষ্ঠিত হবে। একটি বিশাল প্রশ্ন। মুলত শবে বরাত রমজান মাসের পূর্বে মাস শাবানে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। শাবান মাসের পূর্বের মাসকে বলা হয় রজব মাস। রজব মাস সম্পন্ন হওয়ার পর সকলের মনের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য জানার জন্য ঘুরপাক খায় আর তা হলো শাবান মাসের ১৪ এবং ১৫ তারিখ কবে। আলহামদুলিল্লাহ ২০২৫ সালে শবে বরাত পালিত হবে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে।
শবে বরাত কেন উৎযাপন করা হয়?
অত্যন্ত বরকতময় রাত বলেই এই রাতকে সকল মুসলিম ভাই ও বোনেরা গুরুত্বপূর্ণ প্রদান করে থাকে। মূলত সারা বাংলাদেশের নারীদের চেয়ে পুরুষরাই এ রাতকে অধিক মূল্যায়ন প্রদান করে থাকে। নারীরা সারারাত জেগে ইবাদত করে অপরদিকে পুরুষরা মসজিদে রাত অতিবাহিত করে। যেখানে থাকে সম্মিলিত জিকির খানাদানার আয়োজন। অপরদিকে মহিলারা সারা রাত জেগে এই রাতে এবাদত বন্দেগীতে লিপ্ত থাকে। যেখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হিসেবে রয়েছে নফল নামাজ ১০০ রাকাত।
শবে বরাত কবে হবে বাংলাদেশে?
আপনি যদি একজন বাংলাদেশের মুসলিম হয়ে থাকেন তবে অবশ্যই জানতে ইচ্ছে করে যে ২০২৫ সালে এসে শবে বরাত কবে অনুষ্ঠিত হবে। মূলত বাংলাদেশে এই শবে বরাত শুরু হবে ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ দিন শেষের রাতে এবং তার চলবে ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখ পর্যন্ত। অর্থাৎ ১৩ তারিখ দিন শেষ হওয়ার পর এর সকল এবাদত বন্দেগীর কার্যক্রম শুরু হবে যা ১৪ তারিখ সমস্ত দিন চলবে ইনশাল্লাহ। অর্থাৎ গুরুত্বপূর্ণ এই দিনটি ২০২৫ সালে এসে হতে যাচ্ছে রোজ শুক্রবার। তাই অবশ্যই আপনার অন্তরের মধ্যে এই দিনকে বিশেষভাবে স্থান দিয়ে ইবাদত বন্দেগী করার বিশ্বাস প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।
শবে বরাত ২০২৫ কত তারিখে?
আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখ রোজ শুক্রবার অনুষ্ঠিত হবে শবে কদর। ২০২৫ সালের এই শবে বরাতের বিশাল আয়োজনের মাধ্যমে সম্পন্ন করবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমান বৃন্দ। এজন্যই ইতিমধ্যেই সারা বাংলাদেশের বিশাল এক গুঞ্জন সুর উঠেছে। ইতোমধ্যেও শুরু হয়ে গেছে বিশাল প্রস্তুতি। আপনারা জেনে খুশি হবেন যে এই রাতে উদযাপনের জন্য মুসলিমরা বিশেষ প্রার্থনা ইবাদত এবং অন্যান্য ধর্মীয় কার্যক্রম সঙ্গবদ্ধভাবে করে থাকে। সারা বাংলাদেশে এক বিশাল আয়োজন সম্পন্ন হয়ে থাকে। সারা বাংলাদেশের সকল মুসলিম ভাই ও বোনেরা একই দিনে বিশেষ খাবারের আয়োজন করে থাকে। তাই মনের মনিকোঠায় এই দিনকে বিশেষ নজরে রেখে ইবাদত বন্দেগী করতে ভুল করবেন না।
শবে বরাতের করণীয়
এই শবে বরাতের রাত সম্পূর্ণ ইবাদতে কাটানোর জন্য ইসলামী বিশেষ দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এই রাতে বেশি বেশি নফল সিয়াম করা সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ইবাদত। এছাড়াও রয়েছে কোরআন তেলাওয়াত করা যাতে বরকতময় এই রাতে আপনি বিশেষ রহমতে নিমজ্জিত হতে পারেনা। শবে বরাত ২০২৫ – ইতিহাস, তাৎপর্য, ফজিলত, ইবাদত ও করণীয় মহান আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার নিজের এবং পরিবারের জন্য। যাতে করে সেখানে আল্লাহ বারাকা দান করে। গরিব দুঃখীদের সাহায্য করা এবং সাধ্য অনুযায়ী সাদাকা প্রদান করা। এছাড়াও আপনি করতে পারেন মৃত আত্মীয়-স্বজনের জন্য দোয়া।
শবে বরাত ২০২৫ উদযাপনের টিপস
এই রাতকে ইবাদতের মাধ্যমে কাটার জন্য অবশ্যই পূর্ব থেকে আপনাকে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। পুরো রাত কিভাবে আপনি ইবাদত বন্দেগীতে মগ্ন থাকবেন তার জন্য একটি প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। পরিবারের সকলকেই পূর্বেই অবহিত করুন যাতে করে সকলের অংশগ্রহণে আপনি এই রাতকে উদযাপন করতে পারেন। চাইলে পুরো গ্রামবাসীকে এ সম্পর্কে আপনি অবহিত করে একই সঙ্গে সকলের সম্মিলিতভাবে উদযাপন করতে পারেন তাতে আপনার এবাদত বন্দেগী আরো ফলপ্রসূ হবে। এই দিনের বিশেষ আমার হল একটি নফল রোজা রাখা।
শবে বরাত সম্পর্কে প্রচলিত ভুল ধারণা
এই রাতের সবচেয়ে বড় ভুল ধারণা হলো ১০০ রাকাত সালাত আদায় করা। মূলত এ সম্পর্কিত যত হাদিস রয়েছে সবগুলো মওজু বা জাল। সর্বপ্রথম বায়তুল মুকাদ্দাস মসজিদে এই শবে বরাতের নামাজ শুরু হয়। এই রাতে অনেক মানুষ মুক্তির জন্য সালাত আদায় করে থাকে ছয় রাকাত। যার ইসলামে কোন ভিত্তি নেই। এই রাতের আরও একটি ভুল ধারণা হলো রুহের আগমন ঘটে। মূলত রুহ গুলি ইল্লিন বা সিজ্জিন হতে সাময়িকভাবে ছাড়া পৃথিবীতে নেমে আসে এরা এমন ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। এই রাতের সবচেয়ে বড় ভুল হল এই রাতে নাকি কুরআন নাযিল করা হয়েছে।
শবে বরাতের বিদআত থেকে বিরত থাকা
- এই রাত্রের জন্য বিশেষভাবে মসজিদ আলোকসজ্জা করা যাবে না।
- বড় আয়োজনে উৎসব পালন করা ইসলামের সুন্নত সম্মত নয়।
- অতিরিক্ত হালুয়া রুটি বা বিশেষ খাবারের আয়োজন বাধ্যতামূলক নয়।
- সম্মিলিতভাবে নির্দিষ্ট আমল করা সম্পূর্ণ বেদআত বলে গণ্য হবে।
- শবে বরাতের জন্য নির্দিষ্ট কোন সংখ্যক নামাজ নেই।
- আতশবাজি এবং পটকা ফাটানো থেকে এড়াতে বিরত থাকবেন।
শেষ কথা
শবে বরাত একটি পবিত্র রাত, যেখানে মুসলমান নিয়তে আল্লাহর এবাদত বন্দেগী করা। বিদায়াত করে পরিহার করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর সুন্নাত মোতাবেক ইবাদতে মনোযোগী হওয়া প্রত্যেক মুসলিমের উচিত। শবে বরাত সম্পর্কে আরো জেনে জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি করুন। আসুন আমরা সবাই ২০২৫ সালের শবে বরাতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, রহমত এবং বরকত লাভের জন্য বেশি বেশি দোয়া করি। আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
FAQ: শবে বরাত ২০২৫
১. শবে বরাত কি ফরজ?
না, শবে বরাত ফরজ নয়, তবে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত।
২. শবে বরাতের নামাজ কীভাবে পড়বেন?
শবে বরাতের নামাজের কোনো নির্দিষ্ট পদ্ধতি নেই। সাধারণ নফল নামাজের মতোই পড়া যায়।
৩. শবে বরাতের রোজা রাখা যাবে কি?
হ্যাঁ, শাবান মাসের ১৫ তারিখের রোজা রাখা মুস্তাহাব।